অর্ণব সাহা



মাদমোয়াজেল

অর্ণব সাহা



তুমি আমার নস্টালজিয়া, একলা কৈশোর, ফাঁকা চাষীপাড়ার
মাঠ, ব্লেড কারখানার বন্ধ চিমনি ঝুল-কালি মেখে পড়ে আছে
সেই মাঝ-৮০ থেকেই, যখন মহালয়ার সন্ধে মাতিয়ে দিত
হাসান জাহাঙ্গির আর আমরা ভাবতাম জ্যোৎস্না-ভেজা আলোয়
খেলে বেড়াচ্ছে সিন্ধুঘোটক, তখন তুমি কোথায় ? হয়তো
সারাদিনের ঘাম জামায় শুষে নিয়ে ফিরছ স্কুল থেকে, আলগা
তোমার জুতোর ফিতে, অবিন্যস্ত চুলের ক্লিপ, দেবীনিবাস রোডের
সামনে একটা মুখচোরা ছেলে দাঁড়িয়ে থাকত, মনে রেখেছিলে
তুমি ?
#

প্যান্টের পকেটে হাত, ওই রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেছে বুড়ো অশোক
স্যর-ও, দুয়েকবার !
#

আজ বাসায় ফিরছি, এটা ঘরে ফেরার গান, আমার চারপাশে খেলে
বেড়ায় খাপছাড়া যতো মহীনের ঘোড়া, তাদের গিটারের কঙ্কাল
আজও ফিসফিস করে, তোমার অতীত এসে তোমাকেই মুছে
যেতে বলে...


ঠোঁটে ঠোঁট রেখে শুধু ব্যারিকেড গড়া যায় না, শোনো :
হৃদয় এক অনশ্বর আলেয়া, নরম পিলসুজ !
#
ইশরাত জাহান, আমি তোমার হয়ে বন্দুক ওঠাব
মাদমোয়াজেল, আমি তোমাকে ভীষণভাবে চাই...
#


১৮৪৮, প্যারি-বিদ্রোহের সেই দিন
শ্রমিকেরা ওয়াচক্লক লক্ষ করে গুলি ছুঁড়েছিল
#
কবে আসবে মুহূর্তেরা, যখন ট্রাফিক থমকে যাবে ?
প্রকাশ্য রাস্তায় আমি তোমার দু’ঠোঁটে চুমু খাব :
#
চাঁদমারি এ সময়, মিশে থাকা যুগের অসূয়া
আমি তা মানি না, আমি ছুঁয়ে আছি তোমার আঙুল !


বোকাদের আধিপত্য, বোকাদের নিঃস্ব অহংকার !
রং-এর ঝাপটে স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়া দেখে
ভয় করে, পৃথিবীর এইসব চালাক লোকেরা
ধ্বংস করবে আরও কতো শান্ত জনপদ, জানা নেই...
#
জিজেক বলেন : এই বিশ্ব সাইকোঅ্যানালিটিকাল,
পাগলরাই রাজ করবে একদিন এ গোটা দুনিয়া !
#
তার আগে, ম্যাডাম, তুমি আমায় ভাসিয়ে নিয়ে যাও :
প্রলয় ঘটার আগে, চলো, মেরুপ্রদেশে পালাই !
#
শ্বেতভালুকের সঙ্গে ডিনারের সেলফি তুলে রাখি...



নীল রং-এর হাভেলিতে ময়ূর ঘুরেছে একা একা
বৃষ্টি নামবে, আরেকবার বইপাড়া ধূসর হয়ে এল !
#
তুমি এসে দাঁড়াতেই বুকের ভিতর কেঁপে ওঠে
ঘন্টামিনিটের কাঁটা থমকে গিয়েছিল সেইদিন...
#
সংরক্ত এই ফল, থমকে যাওয়া ডালিমের দানা
আমি তাকে ভালোবাসি, যে বুঝেছে লাল রং-এর মানে :
#
সে কী কোনও দেবদূত ? অভিশপ্ত, স্বর্গ থেকে চ্যুত ?
সস্তার ঘর খুঁজছে বেনিয়াটোলা লেন-এ ?
#
তাকে সঙ্গে নিয়ে চলো, কেবিনের পর্দা টেনে দাও
একজোড়া উন্মুখ ঠোঁট তার জন্য অপেক্ষায় আছে
#
ম্যাজিকের মতো এসে নিয়তি কপালে হাত রাখে
শান্ত হয় কলেজস্ট্রিট, একসময় বৃষ্টি থেমে যায় !
#
শাটল ট্যাক্সির জন্য ঘরফেরত মানুষের ভিড়ে
কেউ নেই তোমার, শুধু কামনার নষ্ট পরমায়ু...



মাথার ভেতরটা আজ শ্লেটপাথরের মতো ফাঁকা
কারও ব্যস্ত দৌড়, ছুট, কারও শান্ত পদক্ষেপ নেই
আমি ফাঁকা বারান্দায় দাঁড়িয়ে স্কাইলাইন দেখি :
দিগন্তে মাংসের গন্ধ, পাক খায় আবছা শকুন !
#
আমি ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে বুকের ভেতরে পেতে চাই,
ও আমার কৈশোরের পথ-হারিয়ে-ফেলা সন্ধেতারা !
#
যার মৃদু আলোয় আমি লন্ঠন জ্বালিয়ে সারারাত
অবিন্যস্ত পঙ্‌ক্তিগুলো বারবার কাঁপা কাঁপা হাতে
মকশো করেছি আর ওই মুহূর্তে ঘরের বাইরে
রাতপাহারা দিয়ে গেছে একটা-দুটো ধর্মের কুকুর...
#
আমিও কুকুর হয়ে তোমার দরজায় দাঁড়িয়েছি
আমার পশমে তুমি আঙুল বুলিয়ে দিয়ে যাও !


৫৩ হওয়া অব্দি ওয়েট করতে বললে তুমি !
আমি তো কবুল করছি, এমনই অপেক্ষা করে যাব...
#
জানি, তুমি খুব শান্ত হয়ে থাকবে চিরাগের আলো
যদি ওঠে ঘূর্ণিঝড়, দু’চোখ থাকবে পলকহীন
#
“আপনি জানেন, আমি ঝোড়ো প্রেমে বিশ্বাস করি না !
এটা কোনো দিনরাতের টি-২০ ম্যাচ খেলা নয়...”
#
মরা বকুলের ঘ্রাণ মুছে যায় রাত ভোর হলে...
বলো, পাশে আছি, এক অমসৃণ বিদ্যুতের মতো !
#
৫৩ বড্ড দূর, ওটা প্লিজ, ৪২ করো
“আপনি অধৈর্য খুব, মেওয়া ফলতে সবুর জরুরি”
#
“এগারো বছর বাদে নিজে থেকে এসে ধরা দেব,
এগারো বছর ধরে, অনিঃশেষ, আপনাকে পোড়াব”


উড়ে যাচ্ছে ফাঁকা পলিথিন
ঝড় উঠছে অচেনা শহরে
আজ একটা ফয়সালা হয়ে যাক
আমি মিশব তোমার শরীরে
#
প্রত্যেক মুহূর্তে বুঝতে পারি
তুমি আজ আমার প্রশ্বাস
#
“কমেন্ট লিখতে ভয় পাই,
যদি কেউ অন্য কিছু বলে...”
#
সমুদ্রের জল শুষে আমি
লুকোনো মুক্তো খুঁজে নেব !
#
শুধু তুমি ভয় ছুঁড়ে ফেলো
সব অনুশাসন ভেঙে দাও...


মিথ্যে এক প্রজাপতি, খুব চেনা মেয়েটির নাম !
দু’চোখে লোভের তাজা রং দেখতে পেয়েছি আমিও
#
ডিপি বদলে যায়, কেউ কাঁপা কাঁপা হাতে
বিকেলবেলার রাস্তা পেরোনোর ছবি তুলে রাখে
#
ওকে দেখে টের পাই সাঁঝবিকেলের সন্ধেতারা
এক চোখ অন্ধ আর অন্য চোখে আকাঙ্ক্ষার বিষ
#
উদগ্র জিভের নীচে ধারালো ব্লেডের টুকরো রাখা
#
রাস্তা কাঁপিয়ে ছোটে পরপর দ্রুতগামী ট্রাক
আমি ওর পথ থেকে, নিজেকে, আলগা সরিয়ে নিই !


1 comment:

Facebook Comments