নভেরা হোসেন


রক্তচাপ

নভেরা হোসেন


রক্ত চাপ বাড়ছে
একটু একটু করে সন্ধ্যা হয়ে এলো
পাখিরা সব ঘরে ফিরছে
অফিসে যাত্রীরা ঘরমুখো
বসে , রিক্সায় , ট্রেনে
একটু একটু করে রক্তচাপ বাড়ছে
একটু একটু করে তোমার রক্তচাপ বাড়ছে
পাঁচ মিলিগ্রাম থেকে দশ মিলিগ্রাম
আরো বেশি
কিছুতেই কমছে না   রক্তচাপ
জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী হয়ে গেলো
দলে দলে মানুষ পথে নেমে আসছে
কারো কারো বেতন বাড়ছে
ব্যাবসা ভালো হচ্ছে , শেয়ারের উর্ধমূল্য
বড় বড় টার্কি গ্রিল হচ্ছে
খাসির আস্ত পা রোস্ট
একটু একটু করে তোমার রক্তচাপ বাড়ছে
ডিজিটাল ছেড়ে এনালগ
কোনো রিডিংই স্হির থাকছে না
একটু একটু করে তোমার রক্তচাপ বাড়ছে ....

চশমার তুমি

চশমার তুমি  অনেক গম্ভীর
বইয়ে মুখ ডুবিয়ে দিনরাত
নয়তো ডায়েরিতে  কলম পেষা
ছাই-ভস্ম যা কিছুই হোক না কেন
কমলা রঙের বল পয়েন্টে রক্ত ঝরছে
বলেছিলে আজ যা বর্তমান
কালই হয়তো ছাপার অক্ষরে-
এতো বেশি অক্ষর , এতো বেশি শব্দ
সব মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে
এরোপ্লেনের বিকট শব্দ
শকুনের ডানা ঝাপটানো
তুমি ঘুমের ভেতর ঢুকে পড়ো
তলহীন অথৈ জলে
জল সাঁতরে সাঁতরে জলের দেখা
আরো জল ..আরো জল .....

চশমার তুমি জলে ঘুমিয়ে থাকো
সোনালী ডানার চিলেরা
চক্রাকারে  মাথার ওপর 

পথে , হাসপাতালে


এক দল নার্স লিফ্ট বেয়ে উঠছে
পাশেই রোগীদের লিফ্ট
তার পাশে ডাক্তারদের লিফ্ট
সোজা সাত তলায় চলে গেলে ক্যাফেটেরিয়া
সেখানে কাটলেট , ধোয়া ওঠা চা
সব কথা হচ্ছে থেমে থেমে
মানুষ দিন গুনছে চালের দাম কমার
সবজির দাম বেড়েই  চলেছে
ভোরের আলো ফুটতেই
রিকশা . গাড়ি , ভ্যান , সাইকেলের বিকট শব্দ
কখনো এমন সময় ছিল
সারা রাস্তায় দু-চারটা রিকশা , একটা প্রাইভেট কার
লাল রঙের বিআরটিসি  বাস
এখন রাজপথে লক্ষ লক্ষ মানুষ
লক্ষ লক্ষ গাড়ি
একজন অন্য জনকে  টপকে যাচ্ছে
একজন অন্যজনের পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে
কেউ যেন কাউকে দেখতেই পাচ্ছে না
হাসড়পাতালে রোগীর চোখের দিকে তাকাচ্ছেনা চিকিৎসক
প্রেমিক প্রেমিকার চোখের দিকে তাকাচ্ছে না
তাদের চোখ  ফেসবুকে
মাঝে মাঝে কথার জবাব দিচ্ছে
চুমু খাবার সময়ও ম্যাসেঞ্জারের শব্দে ফিরে তাকানো
এখন  আমরা সবাই প্রোগ্রামড  মানুষ
মোবাইল ফোন না করে
কেউ কারো বাড়ি যাই না 
কিন্তু অক্সিজেন মাস্ক পড়িয়েও তাকে বাঁচানো গেলো না
সাদা কাফনে ঢাকা হয়ে ট্রাক যাত্রা
হাসপাতালে কোনো ছন্দপতন ঘটেনি 
বাড়িতে লোকজন আগরবাতি  জ্বালিয়ে তজবি গুনছে
তুমি মাটির শরীরে মিশে গেলে
পরের দিন ছেলে -মেয়েরা  কে কোন ফ্লাট পাবে তাই নিয়ে হিসাব কষছে
একটা করবী ফুল শুধু তোমার মাথার কাছে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে অবিরত ...


পুরানো দিনের মতো


পুরানো দিনের মতো চারপাশ
একটা কাচের পর্দা সরে গেলো
বরফে আচ্ছাদিত পর্দা
মন্দিরে ঘন্টা বেজে উঠলো দূরে
এক ঝাঁক সারস ডানা মেলছে
জায়গাটা তোমার অনেক চেনা
কিন্তু সব যেন বদলে গেছে
রাস্তায় সাইরেন বাজিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ছুটছে
একদল লোক ঠেলাঠেলি করে
নিয়ে যাচ্ছে হাবলের টেলিস্কোপ
লালন সাঁইয়ের মতো দেখতে একজন পাশ দিয়ে চলে গেল
একটা সাদা সুগন্ধি ফুলের তীব্র গন্ধ
কামিনী নাকি হাস্নাহেনা ?
এখানেতো অসংখ্য  রক্তজবা
একজন স্বাপ্নিক মানুষ তার হাতে চামড়ার ব্যাগ
বেশ ঝকঝকে  চোখ
কোথাও কি একটা বেদনা লুকিয়ে আছে ?
কোথাও কি মিলনের আকাঙ্খা ?
সব সরে সরে যাচ্ছে
ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে সমস্ত আকাশ
তুমি হেঁটে চলেছ কুয়াশা ভেদ  করে
বরফ দিয়ে ঘেরা পর্দা
সব ভেঙে পড়েছে মাথার উপরে
এখানে কোনো ছাদ নেই
ধু ধু  মরীচিকা
ওপারে যাবার অদৃশ্য সেতু  এক





No comments:

Post a Comment

Facebook Comments