অনিন্দিতা ভৌমিক





 বীক্ষণ

অনিন্দিতা ভৌমিক


… a journey to the innermost self




মিলিয়ে নিতে ইচ্ছে করে। সূত্রগুলোর মধ্যে খুলে দেখতে ইচ্ছে করে বিশদ অবস্থান। ললিতবিস্তার থেকে জীবনের তথ্যাদি। এক ক্ষত্রিয় জাতির বাস। তরাই অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত কোনো বিচ্ছিন্ন রাজ্য। ধীর, শূন্যতার অবয়ব থেকে ছিটকে যেতে চাইছে কোনো অস্পষ্ট শহরে। নিছক সহনশীলতার জন্যে চাইছে সবটুকু নিরাময়। 

#

এইভাবে স্তরে স্তরে বাইরের অংশ খুলে গেলে
মূল শিলাখন্ডটি গোলাকার ও মসৃণ হয়ে যায়
সাদা পাতার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বোঝা যায়
কীভাবে ধোঁয়ার কুন্ডলী উঠে যাচ্ছে আকাশে
ব্যাধি ও মৃত্যুর থেকে দূরে কীভাবে দাহ হচ্ছে
জন্মের প্রাথমিক সাল       

#

অস্তিত্বের কোনো লিপিবদ্ধতা নেই। বয়ে আনা নুড়ি-পাথর আক্ষেপ হিসাবে সঞ্চিত। শোক অথবা জন্মান্তরবাদ ছাড়িয়ে গ্রহণ করতে চায় এমন এক অবস্থা যেখানে বনপথ নিবিড়। যেখানে নৈরঞ্জনা নদীর তীরে ধ্যানমগ্ন শ্বাস প্রাকৃত ভাষায় রচনা করে তৃষ্ণা নিবৃত্তির উপায়।

#

বিচ্ছিন্ন, গাঢ়, অনন্ত, সমাহিত
(“ললিতবিস্তার”- বুদ্ধের জীবনী )


সমস্ত আলাপই পর্যায় ভিত্তিক
নিজেকে মুড়িয়ে পুনরায় বিষয়ের শুরু
শীর্ণ জলরেখা তুমুল বর্ষণে
নেমে আসে সুঁড়িপথ দিয়ে
উদ্ভব, উন্নতি ও সামান্য খোলা মুখের ভেতর
তুলে ধরে চিরকালীন ধারার সূত্র

#

তবুও হেঁটে যাওয়া তো অনির্দিষ্ট প্রকৃতির
চিঠির সূচনার মতো উদাস
গড়িয়ে দেয় রূপক
কিছু আকরিক          কিছু কিছু স্তোত্র

#

সভ্যতা তো সময়ের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ভাবে। সাদা পাতার প্রতিফলন, মধ্যরেখা পার করে লেখে বস্তু ও আবেগের বিনিময়। অক্ষাংশ বদলের সাথে সাথে বসতির জরিপ। পুরাতন থেকে যাওয়া ক্ষয়াটে আয়ুষ্কাল।

        আর যেকোন তারিখকে নিম্নতম কালসীমা ধরা যেতে পারে। বিশুদ্ধ তরলে জীর্ণতা, শৈত্য ও রক্তচলাচলের সম্পর্ক বোঝাতে রাখা যেতে পারে গতীয় সমীকরণ। ব্যবচ্ছেদের পর যেখানে অন্তিম বেগ অন্যদিশা দেয়। চলমান অনিবার্যতার দিকে পাশ ফিরে দাঁড়ায় এই ভ্রমণ   এই অঞ্চল   এই নিস্পৃহ বহুকাল।


বৃক্ষ ও বাস্পের এই দেশ। হাতের মুঠোয় ছুঁড়ে দেয় লবণাক্ত মাটি। ধাতুর কাঠিন্যে গজিয়ে ওঠা প্রথম শস্যের শিকড়। আঙুল থেকে গভীরে। দু’পংক্তির বাক্যের ঠিক মাঝামাঝি।

তার জন্ম,পরিবার,সমাজ,ইতিহাস অথবা ত্রিভুজের ভূমি সংলগ্ন বাহু মনোবিদদের কাজে লাগে নিঃসন্দেহে। কাজে লাগে তার একা তাকিয়ে থাকা চোখ। আর প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করে আনা হয় অক্ষিকোটরের বহির্ভাগে। ছোট বাদামের মতো দেখতে অশ্রুগ্রন্থির প্রকোষ্ঠে। সোডিয়াম কার্বনেট ও সোডিয়াম ক্লোরাইড যেখানে জীবাণুনাশক।

#

উত্তরাধিকার বিষয়ক অধ্যায়ের ভেতর ঢুকে আমরা বুঝতে পারি
সভ্যতার প্রথম পতাকাবাহী এখন বরফের উপর, মৃত

#

সেগুন ও পলাশের জঙ্গল থেকে উড়ে আসছে বাদামী বর্ণের স্তব
নিজস্ব লাশের শরীর থেকে চামড়া-পোড়া-গন্ধ
টক স্বাদ পাওয়া যায়
বছরের পর বছর শবাধার উপড়ে সনাক্ত করা হয়
তার কোশ, করোটি ও অন্তঃআবরণীর ভাঁজ

#

জিভের গায়ে লেগে থাকা স্বগতোক্তির ভেদ্য স্তর

মনে রেখো  শেষ সত্য বলে কিছু
এখনও খুঁজে পাইনি
শুধু এই অসমাপ্ত উপন্যাস
আর ঠান্ডা ত্বক নিয়ে
তাকিয়ে আছি মুখের দিকে
যা অবদমিত চিন্তাদের নগ্ন করে
খড়, মাটি, কাদা থেকে সরিয়ে দেয়
একটা বীজের অনুভূতি  
#
যেকোনো ঘটনাকেই স্থান ও কালের সমন্বয়ে বিচার করতে শুরু করি। হাতে গুণে গুণে দেখি কতোটা ত্রুটি রয়েছে লুপ্ত অংশ উদ্ধারে। বোধগম্যতার বাইরে থেকে গেছে কতোটা পাঠের গুরুত্ব।
          কেবল আভাস পাওয়া যায়। শরীরকে সমভাবে স্থাপনের মাধ্যমে তুলে রাখা হয় নির্দিষ্ট ওজন ও মানের ধাতবখন্ড। বর্গাকার। অঙ্কচিহ্নিত।

#
প্রান্তরেখা বরাবর সরু হয়ে যাচ্ছে আলো
ডানদিক ঘেঁষে ধাবমান অশ্বের প্রতিকৃতি
তাকে স্বচ্ছ করে তুলছে

মাটি খুঁড়ে তার হাড়গোড়
ছড়িয়ে দিচ্ছে ধর্মগ্রন্থের পাতায়
#
অথচ কোনো বায়ুমণ্ডল আঁকতে পারছি না কিছুতেই
শীত ও অক্ষরের বাইরে
তুলে রাখতে পারছি না
অন্ধকারের অতিরিক্ত বিষয়

2 comments:

  1. খুব সুন্দর।আত্ম-আবিস্কারের ভিতর দিয়েই যাবতীয়

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্যে ...

      Delete

Facebook Comments